Header Ads

এক সুন্দর পরিবেশে অাবদ্ধ চারপাশ। স্বস্তি মিললনা এত রোমাঞ্চ পরিবেশেও

অাদিনাথে একদিন.......
ফেরার পথে মহেশখালী-কক্সবাজার

প্রতিবার নদী পথে নৌকা ভ্রমণ থাকলেও  এবার হয়েতো বলতে গেলে সমুদ্র পথে। স্পিড বোটগুলো স্বাভাবিক চলতে দেখলে মনের ভিতর ভয় ঢুকে যায়। এই বুঝি উল্টে গেল যাচ্ছে। কিন্তু যখন নিজেই উঠেছি সেরকম কিছু অনুভব হয়নি। খুব উপভোগ করেছিলাম। পুরোদিন মহেশখালী অাদিনাথ পাহাড় ঘুরলাম, খানিকটা বিশ্রাম, খানিকটা গল্প, ছবি তুলা এসবে অতিবাহিত হলো দিনটা। বেলা নেমে অাসলো। সফরসঙ্গী  7প্রিয় ফখরউদ্দিন ভাই, ভাবি ও ছোট্ট মামনি ইফতি। বেলা গড়িয়েছে এবার বুঝি ফিরতে হবে। খাবার হোটেলে ঢুকে লাঞ্চ করলাম কোনোমতে। ফিরার মুহূর্তে নিলাম মহেশখালী ঐতিহ্যবাহী পানের খিলি।

ফেরার পথে মহেশখালী-কক্সবাজার:
নৌ ঘাটিতে যখন অাসলাম তখন দেখলাম শুধু ট্রলার চলবে। সমুদ্রে তখন ভাটা নামলো। স্পিডবোট না চলার কারণ ছিল সাগরে ঢেউ। দূর সমুদ্রে তখন ঢেউ দেখতে পাচ্ছি। অজানা অাতঙ্ক নিয়ে ট্রলারে উঠে অাসলাম। শেষ বেলা বিকেল প্রায় নেমে অাসে। পুব অাকাশে কালো মেঘ, পশ্চিমাকাশে সাদা মেঘে সূর্যকে ঢেকে রেখেছে, এক সুন্দর পরিবেশে অাবদ্ধ চারপাশ। স্বস্তি মিললনা এত রোমাঞ্চ পরিবেশেও। নৌ ঘাটির অংশ টা পেরোনোর পর তীব্র ঢেউয়ের উপর ট্রলার চলে এসেছে। প্রচন্ড গতিতে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে সে বাতাসে বড় বড় ঢেউ সৃষ্টি হচ্ছে। উত্তাল সমুদ্রের তরঙ্গ বিশাল অাকার ধারণ করে ট্রলারের সামনে অাঁছড়ে পড়তেছে। সবার মাঝে অজানা ভীতি কাজ করতেছে। মাঝি ছাড়া কারও মনে স্বস্তি দেখলামনা। বেশিরভাগ দোয়া, দরুদ পড়া শুরু করে দিল। অামি তাকাচ্ছিলাম অাশেপাশে কোন নৌকা অাছে কিনা যে বিপদে এগিয়ে অাসতে পারে, ফখরুদ্দিন ভাই দেখতেছে উপকূল কত কাছে!  সবার চক্ষুদ্বয় রক্তবর্ণ ধারণ করল। অনেক কিছু মনের মধ্যে ভাসতেছে। প্রাণ টা অনেক সংকীর্ণ হয়ে যায়, অাদৌ জীবন নিয়ে ফিরতে পারব কিনা!  নিজের জন্যে ভয় কাজ করেনি অতটা, ছোট্ট মামনি ইফতির দিকে তাকিয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছিল। অামি ওর দিকে তাকাই সে অামার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে অার অামি করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি। বিশাল ঢেউ যখন অাঁছড়ে পড়ে তখন ওপাশে যাত্রীরা অাতঙ্কে দাঁড়িয়ে যায়। পানি এমন উপরে উঠে যে অনেকে ভিজেও যায়। অামি মাঝি ভাইকে জিজ্ঞেস করি, এগুলো কেন?
উনি অামাকে বলেন, প্রথম অাসতেছেন মনে হয়?
-জ্বী ভাই।

-চিন্তা করবেননা কিছু হবেনা। খানিকটা স্বস্তি এলেও ধোঁয়াশা কেটে যায়নি। কয়েকটা স্পিডবোট দেখলাম তারা সবাই লাইফজ্যাকেট পরে অাসতেছে। বাদ বাকি পুরো জায়গায় কোন নৌকা নাই। অতঃপর ঢেউ ছেড়ে উপকূল এলাকায় চলে অাসলো ট্রলার। ফখরুদ্দিন ভাই বুকে হাত দিয়ে বিশাল একটি স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলে। অালোচনা করতেছিলাম, বিচিত্র অভিজ্ঞতা হলো একটা। মনে হয় প্রথম অাসছি সেজন্যে এমন লাগতেছে। প্রাণ নিয়ে ফিরবো সেটা ভাবতে পারিনি। এতক্ষণে ইফতির মা বলে উঠল কি হয়েছে? কি বলতেছেন অাপনারা?

অামি,ফখরউদ্দিন ভাই দুইজন দুজনের দিকে তাকাই থাকছি। উনি এতক্ষণ কোন জগতে ছিলেন! উত্তর দেয়ার মত কিছু থাকলোনা অামার। তখন অামাদের হার্টবিট চরম অবস্থায়। পুরো ট্রলারভর্তি মানুষ অাতঙ্কে উনি কিন্তু সেটা উপভোগ করেই চলেছেন। কিছুই নাকি জানেননা!

সবচেয়ে অবাক হয়েছে ফিরার মুহূর্তে অটোতে করে অাসতেছিলাম। ওখানে এক মহিলা কার সাথে কথা বলতেছেন ফোনে এবং জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতেছেন। কথার বলা অবস্থা দেখে মনে হলো উনি মহেশখালীর বাসিন্দা। উনি, বলতেছেন, সাগরের এমন অবস্থা অামার জীবনে দেখিনি। খুব ভয় পেয়েছিলাম ইত্যাদি ইত্যাদি।
তখনই বুঝতে পারলাম, এমন মুহূর্ত খুব একটা হয়না সাধারণত।
রাত পর্যন্ত অামার হাত,পা যেন অবশ ছিল। এখনও চোখ বন্ধ করে যখন চিন্তা করি সে তরঙ্গের লীলাখেলা, পুরো শরীরটা শিউরে উঠে।

মনে হয় প্রথম ছিল তাই হয়তো অত্যাধিক ভয় পেয়েছি।

-মুহাম্মাদ অাবদুল অাল অামিন।

No comments

Powered by Blogger.